সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা
সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মুল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অনশ্বীকার্য। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা এই তিনটির সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আজকের ছাত্র আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। শিক্ষক মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধ চর্চার অনন্য কারখানা। শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূলবোধের বিকাশ ঘটে থাকে। শিক্ষা ভালো-মন্দ বিচার করতে শিখায়। এই ভালো-মন্দের বিচার মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে। একটি সুস্থ ও সুন্দর মানুষের পথ উপযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক মূল্যবোধের কোন বিকল্প নেই। মূল্যবোধের অনুপস্থিতিতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবেশ ও রাজনীতিসহ সর্বত্র মানবজীবন ব্যবস্থা হয়ে উঠে অস্থিতিশীল। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে সমাজকে করতে পারে আলোকিত ও উদ্ভাসিত। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষকের তত্ত¡াবধানে শিক্ষার্থীকে মূল্যবোধের পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষকের দায়িত্ব হলো, শিক্ষার্থীর জীবনকে সুখী ও স¤্রদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে সর্বপ্রকার মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে প্রকৃত কোন মূল্যবোধের শিক্ষা হচ্ছে না। নৈতিক চরিত্র গঠনের শিক্ষা আজ উপেক্ষিত। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশের সচেতন তরুন প্রজন্ম আজ শিক্ষক, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সমাজপতিসহ বয়োজ্যাষ্ঠ্যদের মুল্যবোধ সম্পর্কে জোরালোভাবে আপত্তি ও প্রশ্ন তুলছেন। বাংলাদেশে দিন দিন মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে। শিক্ষক, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন যন্ত্র, রাজনীতি পর্যন্ত মূল্যবোধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনে দূর্নীতি বর্তমানে ওপেনসিক্রেটে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মূল্যবোধের চরম অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষকদের মূল্যবোধ নিয়েও দেখা দিয়েছেন নানা প্রশ্ন। শিক্ষক সমাজ আজ প্রাইভেট-কোচিং ব্যবসাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীরা যৌণ হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অযোগ্য ব্যক্তিরা রাজনৈতিক পরিচয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাচ্ছেন। সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আলোকিত ব্যক্তিরা যেন সোনার হরিণ। বিচারবিভাগেও ঘুষ, দূর্নীতি হচ্ছে বলে খবর বের হচ্ছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, পরমত সহিষ্ণুতা, সমবেদনা, সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধের চরম অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমাজে চলছে অবৈধপথে অর্থ কামানোর তীব্র প্রতিযোগিতা। প্রতিক্ষেত্রে ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যার বেসাতি। শিক্ষকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে দলাদলি, গ্রুপিং-লবিং, কোন্দল, অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতির চর্চা ও আনুগত্য। পদ পাওয়ার লোভে শিক্ষক সমাজ আজ ছুটছেন দলীয় নেতার পিছনে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষা ব্যবস্থাকে করছে ধ্বংস। আকাশ সংস্কৃতি, তথ্য-প্রযুক্তিকে যুব সমাজ ইতিবাচক হিসেবে না নিয়ে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া।
আমাদের আগামীদিনের প্রজন্ম যাতে সু-নাগরিক হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়, তার জন্যও তাদের মাঝে মূল্যবোধ শিক্ষার প্রসার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর মূল্যবোধ লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শের পতাকাবাহী মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধে সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে সমাজ ও দেশকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারে। একমাত্র শিক্ষকই পারেন ছাত্র ও সমাজের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে মূল্যবোধ কী? দৈনন্দিন সমাজ জীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচরণ যে নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, আমরা সেগুলোকেই সামাজিক মূল্যবোধ বলে আখ্যায়িত করতে পারি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃক্সখলা, ঐক্য প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক নির্নয় সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারাই সম্ভব। দেশে দেশে ও সমাজে সমাজে সামাজিক মূল্যবোধের রূপও ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। দেশ, জাতি, সমাজ, কাল ও প্রকৃতিভেদে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে থাকে। যা ভালো, যা ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে কল্যাণকর, তার মূল্য আছে। ধর্ম, বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা, জীবন দর্শন, রাজনৈতিক আদর্শ, যা আমাদের সমাজ সংস্কৃতিকে লালন করে থাকে সেসবই আমাদের মূল্যবোধের অন্তর্গত।
বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানি স্টুয়ার্ট সি, ডাজ বলেছেন, “সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে ঐ সব রীতি-নীতির সমষ্টি, যা ব্যক্তি সমাজের নিকট হতে আশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট হতে লাভ করে।” সমাজ বিজ্ঞানী বেসারের মতে-“সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সেসব গুণাবলী যা ব্যক্তি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে দেখে খুশি হয় এবং নিজের সমাজ, জাতি, সংস্কৃতি ও পরিবেশে মূল্যবান মনে করে খুশি হয়।”
একমাত্র শিক্ষাই সমাজে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা শিক্ষা ছাড়া আচার-আচরণে বিনয়ী ও ন¤্র হওয়া যায় না। শিক্ষা বিনয়ী হতে শিখায়, ন¤্র হতে শিখায়, ভদ্র হতে শিখায়। শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজের মাঝে নীতি-নৈতিকতা ও সততার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের আবিস্কার।” এরিস্টটলের ভাষায়. “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা।”
সমাজে সে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষা ও মূল্যবোধ বিকাশে ভূমিকা রাখবেন তাদেরকেও সেমানের হতে হবে। একমাত্র আদর্শ শিক্ষকই পারেন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক দুঃখ, ব্যথা, প্রয়োজন ও অসহায় অবস্থার কথা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করবেন এবং এই গুলোর উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হবেন এটাই শ্বাভাবিক।
শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের থাকবে অঘাত ভালোবাসা ও সহানুভূতি। সব শিক্ষার্থীকে তিনি ভালোবাসবেন। তাঁর ভালোবাসার স্পর্শ থেকে কোন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবেন না। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পাপ থেকে পরিত্রাণ করে জাগতিক কল্যাণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। চিনের প্রাচীন ও সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা কনফুসিয়াস বলেছেন-“শিক্ষক হবেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস। তিনি হবেন একজন আদর্শ শাসক”। ভাববাদি দার্শনিক প্লেটোর মতে, “শিক্ষক হবেন ভাববাদী চিন্তার প্রত্যক্ষ ফসল, শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করবেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলো শিক্ষকের দায়িত্ব।”
শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর বন্ধু, সহায়ক ও যোগ্য পরিচালক। শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীর শারিরীক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন।
ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেলের মতে-“শিশু হলো উদ্যানের চারাগাছ। শিক্ষক হলেন তার মালী। শিক্ষকের কাজ হলো সযতেœ চারাগাছটিকে বড় করে তোলা। শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৎ ও সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা শিক্ষকের কর্তব্য”।
যুগে যুগে পরিবার ও সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পিছনে শিক্ষক সমাজই ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি মানুষের জন্য শিক্ষক হিসেবেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনই মহানবীর চরিত্রের দৃষ্টান্ত। আরবের মাটিতে মুসলমানদের প্রথম শিক্ষক ছিলেন মহানবী। মদিনার মসজিদে তিনি সাহাবীদের কোরআন, নামায ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতেন। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ্র বাণী বুঝিয়ে দিতেন। প্রয়োজনবোধে কঠিন বিষয় তিনবার উচ্চারণ করে সকলের বোধগম্য করে তুলতেন।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী(রা) তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি সেই যুগে বিখ্যাত পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের শিক্ষক ছিলেন। তিনি নিজে শিক্ষার্থীদের মসজিদ কেন্দ্রিক কোরআন মজিদ শিক্ষা দিতেন। হযরত আলী(রা) পৃষ্ঠপোষকতাই শিক্ষার্থীদৈর জন্য আরবী ব্যাকরণ রচিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন আরবী সাহিত্যের পন্ডিত ও ব্যাকরণবিদ।
দার্শনিক সক্রেটিস যুব সমাজকে বা তার শিষ্যবর্গকে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতেন। সক্রেটিসের প্রিয় শিষ্য ছিলেন প্লেটো, প্লেটোর ছাত্র ছিলেন এরিষ্টটল, আর এরিষ্টটলের ছাত্র ছিলেন বিশ্ববিজয়ী মহাবীর আলেকজান্ডার। অতিন্ত্রীয়বাদী ধর্ম তত্ত¡বিদ বাগদাদের নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দার্শনিক ইমাম আল গাজ্জালী শিক্ষক সম্পর্কে বলেছেন-“শিক্ষক সর্বদা ছাত্রদের আদর্শ হিসেবে কাজ করবেন, শিক্ষার্থীকে সর্বদা দুষ্ট সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনে সহকর্মী শিক্ষক সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য বা সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষক কখনো শিক্ষার্থীর অসাধুতা সহ্য করবেন না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও তিনি ছিলেন একজন ব্রতধারী শিক্ষক। তিনি শিক্ষককে গুরুর আসনে দেখতে চেয়েছিলেন। প্রাচীন শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেয়া অত্যন্ত গর্হিত বলে বিবেচিত হতো। দরিদ্রতম শিক্ষার্থীকেও গুরু ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্কের ন্যয়। দেনা পাওনার সম্পর্ক ছিল নিন্দনীয়। যে শিক্ষক অর্থের বিনিময়ে বিদ্যা বিক্রি করতেন, সেই বিদ্যা ব্যবসায়ী শিক্ষক কোনরূপ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হতেন। ব্রাহ্মন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুর নির্দেশ মেনে চলাই শিক্ষার্থীর একমাত্র কর্তব্য বলে বিবেচিত হতো। গুরুর কোন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকার শিষ্যের ছিল না। শিষ্যের ধর্মীয় ও নৈতিক জীবন গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিল শিক্ষকের। শিষ্য অসুস্থ্য হলে গুরুকে তার পরিচর্যা ও শুশ্রুষা করতে হতো।
শিক্ষক ও মূল্যবোধ উৎপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষক মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন জাতির দিক নির্দেশক, মূল্যবোধ বিকাশের প্রধান সেনাপতি। শিক্ষক হলেন মূল্যবোধ সৃষ্টির নিপুণ শিল্পী। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকতা হলো ব্রত, সাধনা। এ পেশার সফলতা ও শ্বার্থকতা নির্ভর করে শিক্ষকের নৈতিক গুণাবলীর উপর এবং শিক্ষকের দক্ষতা, যোগ্যতা, বুদ্ধি, বিচার কৌশল এবং ব্যক্তিত্বের উপর। শিক্ষক হলেন মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে কেন্দ্র করেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর মাঝে মূল্যবোধের প্রসার তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। শিক্ষককে বাদ দিয়ে সমাজে মূল্য বোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাঁকে বাদ দিয়ে কোন নৈতিক শিক্ষাও পরিপূর্নতা আসতে পারেনা। তিনিই মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেন। শিক্ষক যদি শ্রেণীকক্ষে এবং বাইরে মূল্যবোধ সৃষ্টি অব্যাহত না রাখেন তাহলে সমাজে দেখা দিবে মূল্যবোধের শূণ্যতা। একমাত্র আদর্শ শিক্ষকই পারেন একাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে।
আমাদের দেশে দিন দিন অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষক পাঠদান করছেন। কিন্তু তরপরও মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। বিভিন্ন কারণেই শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশিত শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। শিক্ষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষক সমাজ এ ব্যাপারে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারবেনা বলেই সচেতন মহল মনে করেন। শিক্ষকের পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা ও বেতন কাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে দলীয়করণ, দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদার অভাবের কারণে শিক্ষক সমাজ সমাজের মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করার জন্য শিক্ষক সমাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা বৈষম্য দূর করতে হবে, শিক্ষকদের জন্য ¯^তন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে। মেধাবী, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। মূল্যবোধভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখতে হবে। যারা শিক্ষকতায় আসবেন তাদের শিক্ষকতা পেশাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষকদেরকে সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে নিজের আদর্শ স্থাপন করতে হবে। কেননা মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান। এর জন্য শিক্ষক সমাজকেই সর্বাগ্রে মূল্যবোধে বলীয়ান হতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজের মধ্যে যদি মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এভাবে চলতে থাকলে জাতি একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের বর্তমানে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। পাশ্চাতের স্টাইলে গড়ে উঠছে সমাজ ব্যবস্থা। নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবোধের চরম সংকট মূহুর্তে দেশের শিক্ষক সমাজকে শ্রেণীকক্ষসহ সমাজ ও রাষ্ট্রে মূল্যবোধ বিকাশের জন্যে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুণেধরা মূল্যবোধকে শিক্ষক সমাজই আবার জাগিয়ে তুলতে পারেন। ছাত্র-ছাত্রী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্ণধারের ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষক সমাজকেই।
আমাদের আগামীদিনের প্রজন্ম যাতে সু-নাগরিক হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়, তার জন্যও তাদের মাঝে মূল্যবোধ শিক্ষার প্রসার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর মূল্যবোধ লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শের পতাকাবাহী মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধে সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে সমাজ ও দেশকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারে। একমাত্র শিক্ষকই পারেন ছাত্র ও সমাজের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে মূল্যবোধ কী? দৈনন্দিন সমাজ জীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচরণ যে নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, আমরা সেগুলোকেই সামাজিক মূল্যবোধ বলে আখ্যায়িত করতে পারি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃক্সখলা, ঐক্য প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক নির্নয় সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারাই সম্ভব। দেশে দেশে ও সমাজে সমাজে সামাজিক মূল্যবোধের রূপও ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। দেশ, জাতি, সমাজ, কাল ও প্রকৃতিভেদে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে থাকে। যা ভালো, যা ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে কল্যাণকর, তার মূল্য আছে। ধর্ম, বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা, জীবন দর্শন, রাজনৈতিক আদর্শ, যা আমাদের সমাজ সংস্কৃতিকে লালন করে থাকে সেসবই আমাদের মূল্যবোধের অন্তর্গত।
বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানি স্টুয়ার্ট সি, ডাজ বলেছেন, “সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে ঐ সব রীতি-নীতির সমষ্টি, যা ব্যক্তি সমাজের নিকট হতে আশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট হতে লাভ করে।” সমাজ বিজ্ঞানী বেসারের মতে-“সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে সেসব গুণাবলী যা ব্যক্তি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে দেখে খুশি হয় এবং নিজের সমাজ, জাতি, সংস্কৃতি ও পরিবেশে মূল্যবান মনে করে খুশি হয়।”
একমাত্র শিক্ষাই সমাজে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা শিক্ষা ছাড়া আচার-আচরণে বিনয়ী ও ন¤্র হওয়া যায় না। শিক্ষা বিনয়ী হতে শিখায়, ন¤্র হতে শিখায়, ভদ্র হতে শিখায়। শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজের মাঝে নীতি-নৈতিকতা ও সততার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের আবিস্কার।” এরিস্টটলের ভাষায়. “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা।”
সমাজে সে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষা ও মূল্যবোধ বিকাশে ভূমিকা রাখবেন তাদেরকেও সেমানের হতে হবে। একমাত্র আদর্শ শিক্ষকই পারেন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক দুঃখ, ব্যথা, প্রয়োজন ও অসহায় অবস্থার কথা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করবেন এবং এই গুলোর উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী হবেন এটাই শ্বাভাবিক।
শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের থাকবে অঘাত ভালোবাসা ও সহানুভূতি। সব শিক্ষার্থীকে তিনি ভালোবাসবেন। তাঁর ভালোবাসার স্পর্শ থেকে কোন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবেন না। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পাপ থেকে পরিত্রাণ করে জাগতিক কল্যাণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। চিনের প্রাচীন ও সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা কনফুসিয়াস বলেছেন-“শিক্ষক হবেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস। তিনি হবেন একজন আদর্শ শাসক”। ভাববাদি দার্শনিক প্লেটোর মতে, “শিক্ষক হবেন ভাববাদী চিন্তার প্রত্যক্ষ ফসল, শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করবেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলো শিক্ষকের দায়িত্ব।”
শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর বন্ধু, সহায়ক ও যোগ্য পরিচালক। শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীর শারিরীক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন।
ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেলের মতে-“শিশু হলো উদ্যানের চারাগাছ। শিক্ষক হলেন তার মালী। শিক্ষকের কাজ হলো সযতেœ চারাগাছটিকে বড় করে তোলা। শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৎ ও সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা শিক্ষকের কর্তব্য”।
যুগে যুগে পরিবার ও সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পিছনে শিক্ষক সমাজই ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি মানুষের জন্য শিক্ষক হিসেবেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনই মহানবীর চরিত্রের দৃষ্টান্ত। আরবের মাটিতে মুসলমানদের প্রথম শিক্ষক ছিলেন মহানবী। মদিনার মসজিদে তিনি সাহাবীদের কোরআন, নামায ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতেন। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ্র বাণী বুঝিয়ে দিতেন। প্রয়োজনবোধে কঠিন বিষয় তিনবার উচ্চারণ করে সকলের বোধগম্য করে তুলতেন।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী(রা) তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি সেই যুগে বিখ্যাত পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের শিক্ষক ছিলেন। তিনি নিজে শিক্ষার্থীদের মসজিদ কেন্দ্রিক কোরআন মজিদ শিক্ষা দিতেন। হযরত আলী(রা) পৃষ্ঠপোষকতাই শিক্ষার্থীদৈর জন্য আরবী ব্যাকরণ রচিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন আরবী সাহিত্যের পন্ডিত ও ব্যাকরণবিদ।
দার্শনিক সক্রেটিস যুব সমাজকে বা তার শিষ্যবর্গকে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতেন। সক্রেটিসের প্রিয় শিষ্য ছিলেন প্লেটো, প্লেটোর ছাত্র ছিলেন এরিষ্টটল, আর এরিষ্টটলের ছাত্র ছিলেন বিশ্ববিজয়ী মহাবীর আলেকজান্ডার। অতিন্ত্রীয়বাদী ধর্ম তত্ত¡বিদ বাগদাদের নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দার্শনিক ইমাম আল গাজ্জালী শিক্ষক সম্পর্কে বলেছেন-“শিক্ষক সর্বদা ছাত্রদের আদর্শ হিসেবে কাজ করবেন, শিক্ষার্থীকে সর্বদা দুষ্ট সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনে সহকর্মী শিক্ষক সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য বা সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষক কখনো শিক্ষার্থীর অসাধুতা সহ্য করবেন না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও তিনি ছিলেন একজন ব্রতধারী শিক্ষক। তিনি শিক্ষককে গুরুর আসনে দেখতে চেয়েছিলেন। প্রাচীন শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেয়া অত্যন্ত গর্হিত বলে বিবেচিত হতো। দরিদ্রতম শিক্ষার্থীকেও গুরু ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্কের ন্যয়। দেনা পাওনার সম্পর্ক ছিল নিন্দনীয়। যে শিক্ষক অর্থের বিনিময়ে বিদ্যা বিক্রি করতেন, সেই বিদ্যা ব্যবসায়ী শিক্ষক কোনরূপ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হতেন। ব্রাহ্মন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুর নির্দেশ মেনে চলাই শিক্ষার্থীর একমাত্র কর্তব্য বলে বিবেচিত হতো। গুরুর কোন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকার শিষ্যের ছিল না। শিষ্যের ধর্মীয় ও নৈতিক জীবন গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিল শিক্ষকের। শিষ্য অসুস্থ্য হলে গুরুকে তার পরিচর্যা ও শুশ্রুষা করতে হতো।
শিক্ষক ও মূল্যবোধ উৎপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষক মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন জাতির দিক নির্দেশক, মূল্যবোধ বিকাশের প্রধান সেনাপতি। শিক্ষক হলেন মূল্যবোধ সৃষ্টির নিপুণ শিল্পী। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকতা হলো ব্রত, সাধনা। এ পেশার সফলতা ও শ্বার্থকতা নির্ভর করে শিক্ষকের নৈতিক গুণাবলীর উপর এবং শিক্ষকের দক্ষতা, যোগ্যতা, বুদ্ধি, বিচার কৌশল এবং ব্যক্তিত্বের উপর। শিক্ষক হলেন মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে কেন্দ্র করেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর মাঝে মূল্যবোধের প্রসার তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। শিক্ষককে বাদ দিয়ে সমাজে মূল্য বোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাঁকে বাদ দিয়ে কোন নৈতিক শিক্ষাও পরিপূর্নতা আসতে পারেনা। তিনিই মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেন। শিক্ষক যদি শ্রেণীকক্ষে এবং বাইরে মূল্যবোধ সৃষ্টি অব্যাহত না রাখেন তাহলে সমাজে দেখা দিবে মূল্যবোধের শূণ্যতা। একমাত্র আদর্শ শিক্ষকই পারেন একাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে।
আমাদের দেশে দিন দিন অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষক পাঠদান করছেন। কিন্তু তরপরও মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। বিভিন্ন কারণেই শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশিত শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। শিক্ষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষক সমাজ এ ব্যাপারে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারবেনা বলেই সচেতন মহল মনে করেন। শিক্ষকের পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা ও বেতন কাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে দলীয়করণ, দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদার অভাবের কারণে শিক্ষক সমাজ সমাজের মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করার জন্য শিক্ষক সমাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা বৈষম্য দূর করতে হবে, শিক্ষকদের জন্য ¯^তন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে। মেধাবী, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। মূল্যবোধভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখতে হবে। যারা শিক্ষকতায় আসবেন তাদের শিক্ষকতা পেশাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষকদেরকে সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে নিজের আদর্শ স্থাপন করতে হবে। কেননা মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান। এর জন্য শিক্ষক সমাজকেই সর্বাগ্রে মূল্যবোধে বলীয়ান হতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজের মধ্যে যদি মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এভাবে চলতে থাকলে জাতি একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের বর্তমানে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। পাশ্চাতের স্টাইলে গড়ে উঠছে সমাজ ব্যবস্থা। নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবোধের চরম সংকট মূহুর্তে দেশের শিক্ষক সমাজকে শ্রেণীকক্ষসহ সমাজ ও রাষ্ট্রে মূল্যবোধ বিকাশের জন্যে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুণেধরা মূল্যবোধকে শিক্ষক সমাজই আবার জাগিয়ে তুলতে পারেন। ছাত্র-ছাত্রী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্ণধারের ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষক সমাজকেই।
সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে অনেক ভালো লিখেছেন ধন্যবাদ
ReplyDelete